বিশেষ প্রতিবেদক।।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হয় চলতি বছরের গেলো ৫ আগস্ট। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন হলেও দেশে আনাচে কানাচে রয়ে গেছে সেই সরকারের অনুসারীরা। তেমনি একজন কক্সবাজারে রামু জোয়ারিনালার ঘোনারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম।
রবিবার (৩০ সেপ্টেম্বর) বিদ্যালয়ে আয়োজিত মা দিবস পালিত হয়। মা দিবসের ব্যানারে দেখা যায়, ‘মানসম্মত শিক্ষা-শেখ হাসিনার দীক্ষা’ প্রতিপাদ্য।
এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি বলেন, বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের মদদপুষ্ট তথাকথিত নতজানু শিক্ষক সংগঠন বাংলাদেশ প্রাথমিক শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় নেতা বনে যায়। এবং স্বৈরাচারী সাবেক সংসদ সদস্য সাইমুম সরওয়ার কমলের ছত্রছায়ায় থেকে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে চাকরী করে আসছে গেল ১৭ বছর ধরে। এমপি কমলের প্রভাব দেখিয়ে নিজ পছন্দের লোককে দিয়ে কমিটি করে সবসময় নিজ স্বার্থ হাসিল করে। প্রায় সময় ক্লাস ফাঁকি দিয়ে এমপি কমলের সফরসঙ্গী হতেন এই শিক্ষক।
এছাড়াও এমপি কমলের বিভিন্ন রাজনৈতিক জনসভায় উপস্থিত থকে বক্তৃতা, অনুষ্ঠান পরিচালনা ইত্যাদি করতেন। প্রাথমিক শিক্ষক সমাজ ও বিভিন্ন অফিস আদালতে এমপি কমলের অত্যন্ত কাছের এবং আস্থাভাজন পরিচয় দিয়ে অনৈতিক সুবিধা নিতেন। দলীয় প্রভাব খাঠিয়ে সাধারন অভিভাবক, ছাত্রছাত্রী এমনকি শিক্ষকদেরকেও মানসিক নির্যাতন করতেন। কয়েকজন শিক্ষক নিয়ে সিন্ডিকেট করে তাদেরকে বিশেষ সুবিধা দিতেন। অনৈতিক সুবিধার জন্য সাধারণ শিক্ষকদের ক্ষমতা দেখিয়ে নতজানু প্রশাসনের সহযোগিতায় বদলী বাণিজ্য করতেন।
বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের আমলের বিভিন্ন নির্বাচন গুলোতে ভোট কেন্দ্রে পছন্দের শিক্ষকদের পোলিং নিয়োগ দিতে সহযোগিতা করতেন এবং তাদের দিয়ে ভোট ডাকাতি করাতেন। রাজি না হলে এমপি কমলকে দিয়ে শাসাতেন এবং অন্যত্র বদলীর হুমকি দিতেন। এমপি কমলের মাধ্যমে বিভিন্ন জনকে চাকরী দেয়ার নাম করে অনেক টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন। বিদ্যালয়ে বিভিন্ন সরকারী অনুদানের টাকা ইচ্ছেমতো বিল ভাউচার করে আত্মসাৎ করেন। কেউ তার অপকর্মের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করলে এমপি কমলের ক্ষমতার প্রভাব দেখাতেন। দলীয় প্রভাব দেখিয়ে এবং এমপি কমলের অনুসারী পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে স্থানীয় শিক্ষা অফিস প্রশাসনকেও দিব্যি নিয়ন্ত্রন করতেন।
বিদ্যালয়ের একমাত্র দপ্তরীকে বিদ্যালয়ের দায়িত্ব বাদ দিয়ে প্রায় সময় নিজের বাড়ীর কাজের লোক হিসাবে বাড়ীর বাজার করাতেন, কক্সবাজারে নিজ সন্তানদেরকে বিদ্যালয়ে আনা-নেওয়াসহ বাড়ীর সমস্ত কাজ কর্ম করাতেন।
স্থানীয় আবু, মো. শাহীনুর, খোরশেদসহ আরো অনেকে বলেন, ওই শিক্ষক ১৭ বছর ধরে একই বিদ্যালয়ে। বেশীর ভাগ সময় নিজে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থেকে আজ্ঞাবহ কতিপয় শিক্ষকদের দিয়ে বিদ্যালয় কার্যক্রম পরিচালনা করেন। অনতিবিলম্বে ফ্যাসীবাদমুক্ত বর্তমান সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে এব্যাপারে হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
তৎকালীন সময়ে এমপি কমল কর্তৃক একটি শিক্ষক মিলনমেলায় বিচারককে হুমকি দেয়ার বিষয়টিও তার ইন্ধনে হয়েছিল। বিগত ফ্যাসিবাদী সরকারের দোসর হিসেবে এখনো ঘাপটি মেরে তিনি বসে আছেন স্বৈরাচারী হাসিনার এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য।
বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় সচেতন মহলের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এখনো কেন ফ্যাসিবাদী শেখ হাসিনার অনুসারী বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের পদে ঘাপটি মেরে বসে আছেন বলে স্থানীয়দের প্রশ্ন। অনতিবিলম্বে তাকে অন্যত্র বদলী করার দাবী তুলেন স্থানীয়রা।
এব্যাপারে অভিযোগটি অস্বীকার করে ঘোনারপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নজরুল ইসলাম বলেন, যে ছবি নিয়ে অভিযোগ করা হচ্ছে তা আগের ছবি। তৎকালীর সরকারের আমলে করা মা সমাবেশের পুরাতন ছবি নিয়ে আমার বিরুদ্ধে অপপ্রচার করা হচ্ছে।
তবে তিনি বিষয়টি অস্বীকার করলেও গত সোমবার (৩০ সেপ্টেম্বর) ঘোনারপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামক ফেসবুক পেইজে শেখ হাসিনার বাণী সম্বলিত ব্যানারে মা সমাবেশ-২০২৪ পালন নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়।