শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া থেকে।।রমজান মাসকে ঘিরেই নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষের জীবনে দুর্বিসহ পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলা ও আশপাশের বাজারগুলোতে। বিশেষ করে ভোজ্য তেল ও চালের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়ে যাওয়ার কারণে সাধারণ মানুষের মাঝে ক্ষোভ ও হতাশা দেখা দিয়েছে। ব্যবসায়ীরা সরকারি নির্ধারিত মূল্যের তুলনায় অনেক বেশি দাম নিচ্ছেন, যা একদিকে সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রাকে বিপর্যস্ত করছে, অন্যদিকে বাজারে অস্থিতিশীলতার সৃষ্টি করছে।
উখিয়া উপজেলার বিভিন্ন বাজার, যেমন উখিয়া বাজার, কোটবাজার, মরিচ্যা ও কুতুপালং বাজারে খোলা সয়াবিন তেল, রূপচাঁদ সয়াবিন তেল, তীর সয়াবিন তেল, পুষ্টি সয়াবিন তেলসহ অন্যান্য ব্র্যান্ডের বোতলজাত তেলের গায়ে সরকার নির্ধারিত ১৭৫ টাকার দাম লেখা থাকলেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী প্রতি লিটারে ২০০ টাকা দাবি করছেন। এ বিষয়ে স্থানীয় বাজারের দোকানদারদের সঙ্গে কথা বললে তারা অস্বীকার করেননি, বরং এক ধরনের ঔদ্ধত্যপূর্ণ মনোভাব প্রকাশ করেছেন। উখিয়া বাজারের এক দোকানদার বলেন, আমাদের সময় নষ্ট করে লাভ নেই, সরকার চাইলে ব্যবস্থা নিক। এমন কথাবার্তা শুনে স্থানীয়দের মধ্যে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে।
এছাড়া, বিশেষ সূত্র জানা যায়, উখিয়া ও কোটবাজারের বড় ব্যবসায়ীরা রমজান মাস আসার আগেই ১০ থেকে ২০টি গুদামে ভোজ্য তেল, চিনি, চুলাবুট, আটা, এবং অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য মজুদ করে রেখেছেন। এর ফলে বাজারে পণ্যের সংকট তৈরি হয়েছে এবং দাম বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষের জন্য তা বিপদজনক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। স্থানীয় জনগণ মনে করছেন, প্রশাসন এসব গুদামের ব্যাপারে সচেতন নয়, যার কারণে পরিস্থিতি এভাবে অব্যাহত রয়েছে।
এদিকে, চালের বাজারেও একই চিত্র দেখা যাচ্ছে। ৭০ টাকার চাল এখন বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, ৮০ টাকার চাল ৯৫ টাকায়। এই ধরনের অতিরিক্ত মূল্য বৃদ্ধি শর্তহীনভাবে ব্যবসায়ীরা আদায় করছে এবং তাদের কাছে চালের মূল তালিকা নেই, যা আরো বেশি সমস্যা সৃষ্টি করছে। ক্রেতারা প্রতিনিয়ত এসব অতিরিক্ত দামে চাল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় পণ্য কিনতে বাধ্য হচ্ছেন।
এ বিষয়ে স্থানীয়দের মধ্যে সাংবাদিক নুর মোহাম্মদ শিকদার বলছেন, আমাদের ওপর জুলুম করা হচ্ছে, আমরা কীভাবে পরিবার পরিজনকে পুষ্টিকর খাদ্য দেবো, যখন বাজারে পণ্যের দাম একেক দিন একেক রকম বাড়ছে? এই অবস্থায়, সাধারণ জনগণ সরকারের কাছে একটাই দাবি জানিয়েছে, তা হলো বাজারের অস্থিতিশীল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ।
অন্যদিকে, বিভিন্ন বাজারে মূল্য বৃদ্ধি ও অবৈধ মজুদ নিয়ে প্রশাসনের অদৃশ্য নীরবতা জনগণের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিয়েছে। সরকারের উচিত ব্যবসায়ীদের অতিরিক্ত মুনাফা করার সুযোগ বন্ধ করা, বিশেষ করে রমজান মাসের মতো গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। প্রশাসন যদি দ্রুত হস্তক্ষেপ না করে, তবে সাধারণ মানুষের দুঃখ-দুর্দশা আরও তীব্র হতে পারে এবং দেশের বাজারে অস্থিতিশীলতা আরো বাড়বে।
এখন সময় এসেছে প্রশাসনের হস্তক্ষেপের, যাতে ব্যবসায়ীদের দৌরাত্ম্য বন্ধ করা যায় এবং বাজারে দাম নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব হয়। স্থানীয় জনগণ আশা করছেন যে, দ্রুত প্রশাসন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে, যাতে তারা সুষ্ঠু ও স্বাভাবিক বাজার পরিস্থিতি উপভোগ করতে পারেন।