নিজস্ব প্রতিবেদক:বিশিষ্ট সংঘটক,সমাজসংস্কারক,পরোপকারী ও সুশীল সমাজের প্রতিনিধি পটল বড়ুয়ার জন্ম ও বেড়ে উঠা উখিয়া উপজেলার মধ্যরত্না গ্রামে।
নন্দিত এই ব্যক্তি মৃত সুরেন্দ্র বড়ুয়া ও মা প্রেমদা বড়ুয়ার চতুর্থ সন্তান।আনুমানিক ১৯৪৯ সালে তাঁর জন্ম।তিনি তৎকালীন প্রাথমিক শিক্ষায় শিক্ষিত ছিলেন।নীরবে নিবৃতে যার পুরো জীবনটাই বিলিয়ে দিয়েছেন সমাজ,সংঘটন ও মানুষের সেবায়।উখিয়া উপজেলায় বৌদ্ধ সমাজে তিনি সবার গ্রহনযোগ্য ও শ্রদ্ধার পাত্র ছিলেন।
গত বৃহঃপতিবার (১১ই জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২ টায় তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করে পরপারে পাড়ি জমান।মৃত্যুের আধ ঘন্টা আগে তিনি সংঘদানসহ পুণ্যদান করে গেছেন।এবং শুক্রবার তিনি পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করবেন এমনটাই বলেও গেছেন।
তাঁর মৃত্যুতে দেশ-বিদেশের অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষীর মাঝে শোকের ছায়া নেমে আসে।বৃষ্টি উপেক্ষা করে তাকে একনজর দেখার জন্য ঢল নামে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও শোক প্রকাশ করেন অনেকে।
চট্টগ্রাম ইউএসটিসির সাবেক ভাইস চ্যান্সেলর ডা: প্রভাত বড়ুয়া সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানান,একজন বিনয়ী,সুশীল,সজ্জন ও উপাসক রত্নের প্রয়াণে শোকাহত। সমাজে একজন নিভৃতচারী শিক্ষা দরদী ও সদ্ধর্ম সেবক দুর্লভ। সন্মানিত ও কল্যাণমিত্রের চির বিদায় অসহনীয়।
ভারতের জ্ঞানলংকার ভিক্ষু জানান,পটল বড়ুয়া দীর্ঘ সময় বুদ্ধ শাসনের কল্যানমুলক কাজ করেছেন।সমাজ সংস্কারক স্নেহভাজন কুশলায়ন মহাথের মহোদয়ের পাশে থেকে সমাজ সদ্ধর্মের জন্য তাঁর আত্মত্যাগ এবং অবদান অনস্বীকার্য।
সংঘটন প্রিয় পটল বড়ুয়া ৯০ দশকের দিকে “পালং বৌদ্ধ সমাজ কল্যান সমিতি”র দৃঢ়তার সাথে প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।তিঁনি দায়িত্বের প্রতি এতই অবিচল ছিল, মান্ধাতার আমলে প্রতিটি মিটিংয়ের চিঠি ও তথ্য মানুষের ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতেন বলে অনেকেই যোগাযোগ মন্ত্রী আখ্যায়িত করেন ।
বর্তমান সময়ে তরুণ প্রজন্মরা অনেকেই পটল বড়ুয়ার আত্নত্যাগের কথা জানবে না। এছাড়াও পালং বৌদ্ধদের একত্রিত করতে পটল বড়ুয়া ৭ দিন ব্যাপি রাজাপালং জাদি মোরার মিলনমেলার অগ্রণী ভুমিকা পালন করেন।
উখিয়া উপজেলার প্রাচীন মধ্যরত্না রত্নাংকুর বৌদ্ধ বিহারটির সামগ্রিক উন্নয়নে পটল বড়ুয়া ভুমিকা ছিল অগ্রগামী।
সুত্রে জানা যায়, সমাজের মৃত্যু,বিয়ে,সংঘদান, কঠিন চীবর দান,পানসল্লাসহ যে কোনো সামাজিক অনুষ্ঠান সুসম্পন্ন করার জন্য নিজে স্বশরীরে উপস্থিত হয়ে পরামর্শ দিয়ে গেছেন সমাজে ও সমাজের বাইরে।
আত্মত্যাগী এই মানুষটির জীবনের মূল্যবান সময়টুকু পরিবারের চেয়ে সমাজ ও সংঘক্ষেত্রে বিনিয়োগ করেন। ব্যক্তি ও কর্মজীবনে পটল বড়ুয়া তিন ছেলে ও তিন মেয়ের জনক।
তাঁর বড় ছেলে রণজিত বড়ুয়া উখিয়া বঙ্গমাতা ফজিলাতুন্নেছা মুজিব মহিলা কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রভাষক।
স্মৃতি চারণ করতে গিয়ে অনেকে অশ্রুসজল চোখে পটল বড়ুয়ার কর্মের গুনগান করেন।বক্তারা বলেন, উখিয়া তথা দক্ষিণ চট্টগ্রামে পটল বড়ুয়া ছিল এক আলোকবর্তিকা। সমাজসেবা,ধর্মের সেবক হিসেবে বর্তমানে তাঁর মত নি:স্বার্থ মানুষ পাওয়া বিরল।মৃত্যুর আগ পর্যন্ত পটল বড়ুয়া সমাজ, জাতি ও ভিক্ষুসংঘের সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন।
তারা বলেন,মধ্য রত্নার সবচেয়ে দামি মানুষটাকে হারাল যার ক্ষতি অপূরণীয়।
উল্লেখ্য, তিনি পন্ডিত ভদন্ত সত্যপ্রিয় মহাথের সুমন শ্রী মহাথের,পন্ডিত ভদন্ত শাসনবংশ মহাথের, বাগ্মীপ্রবর ভদন্ত রেবতপ্রিয় মহাথের, ভদন্ত এস. ধর্মীপাল মহাথের, উ. জবানা মহাথের সহ বাংলাদেশ সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার পূজনীয় সংঘরাজ,উপসংঘরাজ এবং দায়িত্বশীল সংঘ-সদস্যদের সান্নিধ্যে থাকতেন।
এছাড়াও তিনি বিশিষ্ট দানবীর বাবু রাখাল চন্দ্র বড়ুয়া, কর্মবীর জ্ঞানলংকার মহাথের, কুশলায়ন মহাথের মহোদয়গণের নিকটও যথেষ্ট সান্নিধ্য পেয়েছেন।
অন্তেষ্টিক্রিয়া অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়ে স্মৃতি চারণ করেন উখিয়া উপজেলা সংঘরাজ ভিক্ষু মহাসভার সভাপতি এস ধর্মপাল মহাথের,কুশলায়ন মহাথেরসহশতাধিক ভিক্ষুসংঘ।
এতে আরও উপস্থিত ছিলেন হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের কক্সবাজার জেলার সভাপতি এডভোকেট পিন্টু বড়ুয়া,ঘুমধুম ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান দিপক বড়ুয়া দিপু,চেয়ারম্যান অরবিন্দু বড়ুয়া,বাংলাদেশ বৌদ্ধ সমিতি যুব পরিষদের জেলা সভাপতি এডভোকেট অনিল কান্তি বড়ুয়া,কক্সবাজার মেডিকেল কলেজের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার শংকর বড়ুয়া, সুরক্ষা পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অমর বিন্দু বড়ুয়াসহ উখিয়া তথা চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চলের বৌদ্ধ নেতারা।
Discussion about this post