মে ১৯, ২০২৫

দৈনিক উখিয়া

উখিয়া-টেকনাফে এনজিও নিয়োগে অনিয়ম: স্থানীয়রা বঞ্চিত, বহিরাগতদের দৌরাত্ম্য

শাকুর মাহমুদ চৌধুরী, উখিয়া (কক্সবাজার) থেকে।। কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শিবির ঘিরে গড়ে ওঠা শতাধিক এনজিওতে চলমান নিয়োগ প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, স্বজনপ্রীতি ও বহিরাগতদের আধিপত্য নিয়ে চরম ক্ষোভে ফুঁসছে উখিয়া-টেকনাফের স্থানীয় জনগণ।
অভিযোগ উঠেছে, নিয়োগের নামে কেবল “আইওয়াশ”—আয়োজিত হয় ইন্টারভিউ, আর নিয়োগ হয় আগেই নির্ধারিত বহিরাগত আত্মীয়-স্বজনদের। এতে উপেক্ষিত হচ্ছে এলাকার হাজার হাজার শিক্ষিত বেকার যুবক।

স্থানীয়রা বলছেন, এই এনজিও কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে স্থানীয় ভূমি, অবকাঠামো ও মানবসম্পদ ব্যবহার করে, অথচ চাকরি পাচ্ছে ঢাকাসহ দেশের অন্যান্য এলাকার লোকজন।

রাজাপালং ইউনিয়নের স্নাতকধারী তরুণ এম.এ. হাকিম বলেন, প্রতিবারই এনজিওগুলো বিজ্ঞপ্তি দেয়, আবেদন করি, ইন্টারভিউ দেই, কিন্তু দেখি নিয়োগ হয় আগে থেকেই ঠিক করা লোকদের। এত পড়ালেখা করে কী লাভ, যদি নিজের এলাকাতেই কাজ না পাই?

হাকিমের মতো হাজারো তরুণের কণ্ঠে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে একই ক্ষোভ—এনজিওগুলোর লোকাল কোটা নামমাত্রই থাকলেও বাস্তবে সেটি মানা হয় না।

স্থানীয়দের অভিযোগ, নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গোপন তালিকা তৈরি হয় আগে থেকেই। নিয়োগ বোর্ডে যারা থাকেন, তাদের সঙ্গে সম্পর্ক থাকলে চাকরি নিশ্চিত। একজন সাবেক এনজিওকর্মী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, “নিয়োগের আগেই জানি কে চাকরি পাবে। ইন্টারভিউটা শুধু ‘নাটক’।

বর্তমানে উখিয়া-টেকনাফে প্রায় ১২০টি এনজিও কাজ করছে। এসব প্রতিষ্ঠানে সরাসরি কর্মরত আছেন প্রায় ২০ থেকে ২৫ হাজার জন। অথচ স্থানীয়দের অংশগ্রহণ মাত্র ১০ থেকে ১৫ শতাংশ। অন্যদিকে, এলাকার শিক্ষিত যুবকরা বেকার থেকে সমাজে হতাশা ও ক্ষোভ তৈরি করছে, যা নিরাপত্তাজনিত হুমকিতেও রূপ নিতে পারে বলে মনে করছেন স্থানীয় বিশ্লেষকরা।

স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, তরুণ সমাজসহ বিভিন্ন শ্রেণিপেশার মানুষ দাবি তুলেছেন—প্রত্যেক এনজিওতে অন্তত ৮৫% পদ স্থানীয় শিক্ষিত ও দক্ষ যুবকদের দিয়ে পূরণ করতে হবে। এতে একদিকে যেমন বেকারত্ব হ্রাস পাবে, অন্যদিকে উন্নয়ন হবে টেকসই।

উপজেলা প্রেসক্লাব উখিয়া’র সদস্য সচিব সাংবাদিক জাহেদ আলম বলেন, আমাদের এলাকায় আমাদের সমস্যা, আর চাকরি করে বাইরের লোকজন! এভাবে চলতে পারে না।

স্থানীয়দের দাবি, জেলা প্রশাসন ও এনজিও ব্যুরো যেন নিয়মিত মনিটরিং করে এবং লোকাল কোটা নিশ্চিত করতে বাধ্য করে প্রতিটি এনজিওকে। স্থানীয় কোটা না মানলে অনুমোদন বাতিলসহ শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়ারও দাবি উঠেছে।

রোহিঙ্গা সংকট একটি আন্তর্জাতিক ইস্যু হলেও এর প্রভাব সরাসরি পড়েছে কক্সবাজারবাসীর জীবনে। তাই এই সংকট ব্যবস্থাপনায় কাজ করতে গিয়ে যেন স্থানীয়রাই উপেক্ষিত না হন, সেটি নিশ্চিত করা জরুরি।

প্রতিটি এনজিওতে স্থানীয়দের জন্য ৮৫% কোটা বাধ্যতামূলক করা নিয়োগে স্বচ্ছতা ও তদারকির জন্য প্রশাসনিক টাস্কফোর্স গঠন।