শাহীন মাহমুদ রাসেল, কক্সবাজার প্রতিনিধি।। বুধবার মধ্যরাতে প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে কক্সবাজারের উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়ন যুবদলের কমিটি অনুমোদন দিয়েছে কক্সবাজার জেলা যুবদল। অনুমোদিত কমিটির তালিকা ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ার পর থেকে সমালোচনার ঝড় উঠেছে উপজেলাজুড়ে। কমিটিতে দুর্ধর্ষ মাদক কারবারি, রোহিঙ্গা, ট্রাক ড্রাইভার থেকে কোটিপতি হওয়া লোকজনকে স্থান দেওয়ায় বিস্ময় প্রকাশ করেছেন বিএনপি, যুবদল-ছাত্রদলের সাবেক ও বর্তমান নেতা-কর্মীরা।
অভিযোগ উঠেছে, উখিয়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব এই কমিটি ঘিরে যেন টাকা ইনকামের মহোৎসবে মেতে উঠেছেন। তারাই মুলত মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে রোহিঙ্গা, মাদক কারবারিদের হাতে কমিটি তুলে দিয়েছেন। যে টাকার একটি অংশ জেলা কমিটির কাছেও পৌঁছেছে। এমন অভিযোগ দলীয় নেতাকর্মীসহ পদবঞ্চিতদের।
জানা গেছে, বুধবার (২২ জানুয়ারি) রাতে জেলা যুবদলের সহ-দপ্তর সম্পাদক রফিকুল ইসলাম মিয়াজির স্বাক্ষরিত প্যাডে শাহ আলমকে সভাপতি, মোহাম্মদ হোছন মনুকে সাধারণ সম্পাদক ও আবুল ফয়েজকে সাংগঠনিক সম্পাদক করে পালংখালী ইউনিয়ন যুবদলের ৭ সদস্য বিশিষ্ট কমিটি ঘোষণা করা হয়। এছাড়াও শাহ আলমগীর বাহাদুরকে সিনিয়র সহ সভাপতি, আব্দু সালামকে সহ সভাপতি, মোহাম্মদ রুবেলকে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও রায়হানুল ইসলাম চৌধুরীকে মনোনীত করা হয়েছে।
এতে কক্সবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি এডভোকেট সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল ও সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন জিসানের নির্দেশক্রমে উখিয়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক এম. সাইফুর রহমান সিকদার ও সদস্য সচিব খাইরুল আমিন নতুন এই কমিটির অনুমোদন দেন বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই নতুন কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোছন মনুর বাবা আবদুল করিমের রোহিঙ্গা পরিচিতি (এনভিসি) কার্ডের ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। এতে নানা মহলে চলছে নানা গুঞ্জন।
ইউনিয়ন পরিষদের তথ্য ও স্থানীয় ইউপি সদস্য নুরুল আলম বলেন, ‘সদ্য ঘোষিত কমিটির সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোছন মনুর বাবা আবদুল করিম একজন রোহিঙ্গা। তার মা জুলেখা বেগমকে বিয়ে করার পর স্থায়ীভাবে ক্যাম্পে বসবাস শুরু করেন। এখনো তারা রোহিঙ্গা হিসেবে যাবতীয় সুযোগ সুবিধা ভোগ করলেও এই দম্পতির ছেলে মনু অল্প দিনে মাদক কারবারে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। সে একজন দুর্ধর্ষ মাদক কারবারি হলেও একটা খাবার হোটেলকে সাইনবোর্ড হিসেবে ব্যবহার করে মাদক কারবারে আয় করা টাকা ছিটিয়ে এই পদটি ভাগিয়ে নিয়েছেন।’
স্থানীয় যুবদলের নেতাকর্মীরা জানান, নব নির্বাচিত সভাপতি শাহ আলম ও সাধারণ সম্পাদক মনুর পারিবারিক ব্যবসা হলো মাদক ব্যবসা। তারা মাদক মামলায় বিভিন্ন সময়ে গ্রেপ্তারও হয়েছেন। এখনো তারা মাদক কারবারের সাথে জড়িত রয়েছেন। এমন মাদক মাফিরা কিভাবে যুবদলের সভাপতি সম্পাদক হয় বিষয়টা বুঝে আসে না।
পালংখালী ইউনিয়ন যুবদলের সাবেক সদস্য সচিব ও সভাপতি প্রার্থী পদবঞ্চিত সরওয়ার সিকদার বলেন, ‘কেন্দ্রীয় যুবদল কিংবা তারেক রহমান মাদক, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজ ও হাইব্রিডমুক্ত যুবদলের যে নির্দেশনা দিয়েছেন উপজেলা যুবদলের আহবায়ক ও সদস্য সচিব তার ব্যত্যয় ঘটিয়েছে। যুবদলের এমন আকাল পড়েনি যে রোহিঙ্গা এবং মাদক ব্যবসায়ী দিয়ে কমিটি করতে হবে। এদের চাইতে আরো যোগ্য ও ত্যাগী নেতা ছিল যাদেরকে দিয়ে কমিটি করা যেত। আওয়ামী সরকারের আমলে এক প্রভাবশালীর নেতার ছত্রছায়ায় তিনি মাদক ব্যবসা করে গেছেন। এখন ব্যবসা চালিয়ে যেতে মনু যুবদলের দলের পদ কিনেছেন।’
এই কমিটিতে প্রকৃত ত্যাগী নেতাদের দূরে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে বলে দাবি করে তিনি আরও বলেন, ‘আ.লীগের দুঃশাসন আমলে বাড়িতে থাকতে পারিনি। এখন টাকা খেয়ে একজন রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গাকে সাধারণ সম্পাদক ও আরেকজন ট্রাক ভাইভার থেকে কোটিপতি হওয়া ব্যক্তিকে সভাপতি করেছে। এরা মুলত মাদক কারবারি। একারণে আমার পুরো রাজনৈতিক ক্যারিয়ার অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া হয়েছে।’ এছাড়া টাকার বিনিময়ে বিতর্কিতদের দিয়ে এই কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
এই অভিযোগ অস্বীকার করে সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ হোছন মনু বলেন, ‘আমি মাদক ব্যবসায়ী নয়। আমার বাবা রোহিঙ্গাও নয়। যারা অভিযোগ করছেন তারা পদ না পেয়ে আমার বিরুদ্ধে বিষেদাগার করছেন।’ প্রতিবেদকের হাতে আসা তার বাবার রোহিঙ্গা কার্ডের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে বিষয়টি তিনি এড়িয়ে যান।
এইসব অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে অনেকটা সাধারণ সম্পাদক মনুর পক্ষেই সাফাই গাইলেন উখিয়া উপজেলা যুবদলের আহবায়ক এম. সাইফুর রহমান সিকদার। তিনি বলেন, ‘মনু মাদক ব্যবসায়ী নয়। তাকে একটি মাদক মামলায় ফরওয়ার্ডিং আসামি করা হয়েছে। এছাড়া জেলা যুবদলের নির্দেশে তাদের নেতা বানানো হয়েছে।’ একজন রোহিঙ্গাকে কেন যুবদলের সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে; এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি তেমন কোন সদোত্তর দিতে পারেনি।
এবিষয়ে জানতে কক্সবাজার জেলা যুবদলের সভাপতি সৈয়দ আহমদ উজ্জ্বল ও সাধারণ সম্পাদক জিসান উদ্দিন জিসানের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করেও ফোন রিসিভ না করায় তাদের বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি