এসব আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে উনারাই সব হ্যান্ডেল করতেন। আমি নিজে কিছু করতাম না।
নিজস্ব প্রতিবেদক।। কক্সবাজারের উখিয়া শাহপুরী হাইওয়ে থানার পুলিশ (প্রকাশ ক্যাশিয়ার ) মুন্সি সালাউদ্দিনের নামে বেপরোয়া চাদাঁবাজির অভিযোগ উঠেছে।দেশের বর্তমান ক্লান্তিলগ্নেও বিভিন্ন গাড়ি সমিতি ও ব্যবসায়ীদের কাছে থেকে মাসোহারা নিতে ব্যস্ত থাকেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।
অথচ এসব তথ্য জানেও না শাহপরী হাইওয়ে থানায় কর্মরত অনেক অফিসার ও ইনচার্জরা।
হাইওয়ে থানায় খাবারের ম্যাচের নাম ব্যবহার করে তিনি বিভিন্ন কোম্পানির এজেন্ট ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে প্রতি মাসে একটি নির্ধারিত টাকা আদায় করে আসছিলেন।
প্রত্যেক মাসের নির্ধারিত সময়ের মধ্যে তাদের ম্যাচের জন্য টাকা না দেয় তাহলে সড়কে তাদের গাড়ি আটকিয়ে হয়রানি করেন। পরে দরকষাকষিতে সমঝোতায় না আসলে মোটা অংকের মামলা হাকিয়ে দেন বলেও অভিযোগ রয়েছে এই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।
সম্প্রতি আওয়ামিলীগ সরকার পতনের পর পুলিশ বাহিনীর বদনাম হলেও সেই বদনাম গোছাতে উপর মহলে আমূল পরিবর্তন এনেছেন অন্তর্বতীকালীন সরকার। যার কারণে পুলিশ বাহিনী এখনো পুরোপুরী কর্মস্থলে সক্রিয় হয়ে উঠতে পারেনি। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে শাহপুরী হাইওয়ে থানায় কর্মরত মুন্সি সালাউদ্দিন সড়কে অবৈধ গাড়ি ব্যবসায়ীদের সাথে আঁতাত করে একটি সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন।
অনুসন্ধানে উঠে এসেছে , কুতুপালংয়ের পাহাড় খেকো অবৈধ ড্রাম্প-ট্রাক ব্যবসায়ী মনছানু বড়ুয়া, উখিয়া সিএনজি সমিতি ও ব্যাটারি চালিত টমটম সমিতির সভাপতি মামুন চৌধুরী, ড্রাম্প-ট্রাক সমিতির সদস্য কামাল উদ্দিন ও নুর মোহাম্মদ বলির সাথে আঁতাত করে পুরো উখিয়া উপজেলায় প্রত্যেক অবৈধ ড্রাম্প-ট্রাকসহ সিএনজি, টমটমের একটি বিশেষ চিহ্নিতকরণ টোকেনের মাধ্যমে সড়কে বৈধতা দিয়ে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন।
কোন গাড়ি নির্ধারিত টোকেন গ্রহণ না করে তাহলে সড়কে দায়িত্বরত অফিসারদের ব্যবহার করে গাড়িগুলো থানাতে নিয়ে আসা হয়। পরে তাদের সাথে লিয়াজু সিস্টেম মেইনটেইন করে মোটা অংকের অর্থ আদায় করতো। পরবর্তীতে মাসিক চুক্তি বা টোকেনের মাধ্যমে এসব গাড়িগুলোকে সড়কে চলাচলের জন্য নানান শর্ত জুড়ে দেয়া হতো।
সেই থেকে এখন পর্যন্ত দাপ্তরিক প্রত্যেক লেনদেন সালাউদ্দিনের সাথে সমন্বয় করেই সম্পন্ন হয়ে চলছে এই থানার কার্যক্রম। সম্প্রতি হাইওয়ে থানার কর্মরত অফিসারদের সড়কে দায়িত্ব পালনে দেখা না গেলেও দাপ্তরিকভাবে মাসিক লেনদেনের কার্যক্রম সচল রেখেছে সালাউদ্দিন। তিনি ফাঁড়িতে বর্তমানে একাই রাম রাজত্ব কায়েম করে বিভিন্ন অসাধু কাজের লেনদেনের সমাপ্তি ঘটাচ্ছে বলেও জানান এক বিশ্বস্ত সুত্র যা জানেও না তাঁর উর্ধতন কর্মকর্তারা। এমন ঘটনা ঘটেছে কুতুপালং এক মিনি-ট্রাক মালিকের সাথেও।
ভুক্তভোগী এক মিনি ট্রাক মালিক জানায়, গত ২৯ আগস্ট রোহিঙ্গা ক্যাম্পে মালামাল নিয়ে যাওয়া আমার একটি গাড়িতে ড্রাইভিং লাইসেন্স না থাকায় মামলা দিতে এপিবিএন পুলিশ হাইওয়ে ফাঁড়িতে হস্তান্তর করেছিল গাড়িটি মামলা দিলে হয়তো ৫ হাজার টাকা আসতো। মুন্সি সালাউদ্দিন বিভিন্ন অপ-কৌশল ব্যবহার করে আমাকে একধরনের জিম্মি করে পেলছিল। এমন কি দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতি ও থানাতে বড় অফিসার না আসা পর্যন্ত গাড়িটি হাইওয়ে থানাতে রেখে দেওয়ার হুমকি দেন। পরে অনেক আকুতি মিনতির পরে মামলা ছাড়া ১৫ হাজার টাকা নিয়ে গাড়িটি ছেড়ে আনতে হয়। তিনি আরো দাবি করেন, শাহপরী হাইওয়ে থানা সালাহ উদ্দিনকে টাকা দিলেই ঘুরে গাড়ির চাকা।
জানা যায়, শাহপুরী হাইওয়ে থানাতে মুন্সি সালাউদ্দিন দীর্ঘ প্রায় ৩/৪ বছর পর্যন্ত এক জায়গায় দায়িত্বরত থাকায় এলাকার প্রত্যেক বৈধ-অবৈধ ব্যবসায়ীদের সাথে পরিচিতি লাভ করেন। সেই সুবাধে মাদকসহ বিভিন্ন চোরাইমাল পাচারকারীদের সাথেও তার সখ্যতা রয়েছে। চোরাইমাল পাচারে জড়িত অনেকের সাথে সু-সম্পর্ক থাকায় তাদের থেকেও মাসিক ভিত্তিক একটি নির্ধারিত অর্থ নিতো এই কর্মকর্তা। নিয়মিত মাসোহারা না দিলে ফাঁড়ির ডিউটি অফিসারদের মাধ্যমে তাদেরকে নজরে রেখে মালামাল পাচার কাজে আইনি প্রক্রিয়া চালাতো। তার এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড লুকাতে সিন্ডকেট হিসেবে তার রয়েছে উখিয়ার একাধিক সাংবাদিক। তাদের মাসোহারার মাধ্যমে এসব অবৈধ কাজ ভাগভাটোয়ারা মাধ্যমে সম্পন্ন করতেন তিনি।
এসব ঘটনা শুনে বৈষম্যবিরুধী ছাত্র আন্দোলনের উখিয়ার রাফি জানান, এসব অসাধু কর্মকর্তাদের শুধু উখিয়া নই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেতে হবে। এইখানে দুর্নীতি অনিয়ম এক বিন্দু পরিমানও ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা প্রত্যেক অফিসারদের সাথে আলাপ করব। সড়কে টোকেন বাণিজ্য, চাদাঁবাজি এসব চলবে না। কাগজপাতির ত্রুটি থাকলে আইন অনুযায়ী মামলা দিয়ে স্লিপ হাতে বুঝিয়ে দিতে হবে। মামলার কথা বলে হ্যান্ডক্যাশ টাকা নেওয়া যাবে না। এসব অপ-সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে।
স্থানীয় সচেতন মহল বলছে, এসব অসাধু পুলিশ কর্মকর্তাদের জন্য আজ সারা দেশে পুলিশ বাহিনীর এই করুণ অবস্থা। অতি দ্রুত এই দুর্নীতিবাজ (মুন্সি) সালাউদ্দিনকে বরখাস্ত করা হউক। আওয়ামিলীগের আমলের হাইওয়ে পুলিশ আমরা চাই না। স্বাধীন দেশের স্বচ্চ ও সৎ পুলিশ হউক সড়কে এটাই আমাদের কাম্য।
অভিযুক্ত মুন্সি সালাউদ্দিনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি এসব অস্বীকার করে বলেন, এসব আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষের সাথে আলাপ করে উনারাই সব হ্যান্ডেল করতেন। আমি নিজে কিছু করতাম না। এসব বিষয়ে শাহপুরী হাইওয়ে ইনচার্জ (সাব-ইন্সপেক্টর) মোস্তফা কামালকে একাধিকবার কল দিয়েও যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশের এসপি (কুমিল্লা রিজওনাল) খাইরুল হকের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, অভিযোগকারী ব্যক্তিদের স্পেসিফিক তথ্যসহকারে পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুবিধা হতো।
Discussion about this post